৩ বছরেই ভেঙে গেল ৬০৯ কোটি টাকার শীতলক্ষ্যা সেতুর সংযোগ সড়ক


Better Narayanganj প্রকাশের সময় : মে ২০, ২০২৫, ১:৩৬ অপরাহ্ন / ১০০০
৩ বছরেই ভেঙে গেল ৬০৯ কোটি টাকার শীতলক্ষ্যা সেতুর সংযোগ সড়ক
উদ্বোধনের মাত্র ৩ বছরের মধ্যেই ভেঙে গেছে ৬০৯ কোটি টাকায় নির্মিত নারায়ণগঞ্জের তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর সংযোগ সড়ক। গত শুক্রবার রাতে ভারী বর্ষণে সেতুর পশ্চিম পাশে সদরের সৈয়দপুর অংশে এ ভাঙনের সৃষ্টি হয়। বর্তমানে চালকদের সতর্কতা করার জন্য সেখানে লাল কাপড় দিয়ে সংকেত দেওয়া হয়েছে।

এদিকে সেতু চালু হওয়ার মাত্র কয়েক বছরের মাথায় সড়ক ভেঙে যাওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। তাদের মতে, কাজে অবহেলা ও তড়িঘড়ি করে ব্রিজ নির্মাণের কাজ শেষ করার কারণে এই ঘটনা ঘটেছে।

নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর  শীতলক্ষ্যা নদীতে নির্মিত এই সেতুর উদ্বোধন করা হয়। ২০১০ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় ৩৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে বন্দর উপজেলার মদনগঞ্জ থেকে সদর উপজেলার সৈয়দপুর পর্যন্ত ১ দশমিক ২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু প্রকল্প অনুমোদন হয়। তখন চুক্তি হয় সেতুটি নির্মাণে ৩১২ কোটি টাকা সৌদি উন্নয়ন তহবিল (এসএফডি) ঋণ দেবে।বাকি টাকা সরকার জোগান দেবে।

২০২৩ সালের মধ্যে সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা ছিল সড়ক ও জনপথ বিভাগের। এই প্রকল্পে পরামর্শক ও ঠিকাদার নিয়োগ নিয়ে সরকারের সঙ্গে অর্থায়নকারী সংস্থা এসএফডির টানাপোড়েনের কারণে ৭ বছর লেগে যায়। এতে প্রকল্পের ব্যয় ও মেয়াদ বাড়াতে হয়। ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি সেতুর নির্মাণকাজের উদ্বোধন করা হয়। আর ৩৭৭ কোটি টাকার প্রকল্পটি শেষ হয় ৬০৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকায়।

সেতুটির নামকরণ করা হয় প্রয়াত সংসদ সদস্য নাসিম ওসমানের নামে। ‘নাসিম ওসমান সেতু’ নামে জারি করা হয় প্রজ্ঞাপন। গত ৫ আগস্টের পর স্থানীয়রা সেতুটির নাম পরিবর্তন করে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা নাম দিলেও কাগজে-কলমে এটি এখনো নাসিম ওসমান সেতু নামেই রয়েছে।

এই সেতুটি নারায়ণগঞ্জ সদর ও বন্দর দুই উপজেলাকে সংযুক্ত করে। পাশাপাশি পদ্মা সেতুর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে। এর ফলে নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ এবং পদ্মা সেতু হয়ে খুলনা, যশোর, মাগুরা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া থেকে আসা মানুষ ঢাকা শহরে প্রবেশ না করেই সরাসরি চট্টগ্রাম যেতে পারছে। এর ফলে যেমন দূরত্ব কমে আসে তেমনি ঢাকার ওপর যানবাহনের চাপও কমে যায়।

পাশাপাশি দুই পাড়ের মানুষের নৌকায় চড়ে নদী পারাপারের ভোগান্তি দূর হয়। তবে এখনই সড়ক ভাঙতে শুরু করায় এলাকাবাসীর মধ্যে দুশ্চিন্তা কাজ করছে।

ফরাজীকান্দা এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম বলেন, সড়কের নিচের মাটি সড়ে গেছে। যার কারণে রাস্তার মধ্যে বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। আসলে কাজ করার সময়ে অনেক তাড়াহুড়ো করা হয়েছে। যার কারণে তিন বছরের মধ্যেই এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।

আরেক স্থানীয় বাসিন্দা আলমগীর হোসেন বলেন, গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এই সেতুর উদ্বোধন করা হয়েছিল। পর্যাপ্ত ড্রেনেজের ব্যবস্থা না করেই সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। এ কারণে বৃষ্টির পানি জমে সড়কের এমন অবস্থা হয়েছে। অতি শিগগিরই সড়কটির সংস্কার কাজ করার জোর দাবি জানাচ্ছি।

নারায়ণগঞ্জ জেলা সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর এর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আল রাজী লিয়ন বলেন, ‘আজ (সোমবার) থেকেই সড়কের সংস্কার কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বৃষ্টির কারণে কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। তবে মঙ্গলবার সকাল থেকেই এই কাজ শুরু হবে।’

উদ্বোধনের মাত্র কয়েকবছরের মধ্যেই সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়ক ভেঙে যাওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘সেতুর উপরের অংশে একাধিক স্থানে পানি সরানোর জন্য পাইপের ব্যবস্থা করা হলেও পাইপের প্রত্যেকটি মুখ স্থানীয়রা বন্ধ করে দিয়েছে।

এর ফলে পানি শুধুমাত্র এই স্থান দিয়ে সরে যেতো। ফলস্বরূপ গত টানা বৃষ্টিতে সড়কটির একটি অংশে ভেঙে গেছে। সংস্কার কাজ শেষ হয়ে গেলে সড়কটি চলাচলের জন্য পুরো উপযোগী হয়ে যাবে বলে জানান তিনি।